লো কার্ব ডায়েটঃ কিটো ডায়েটের বিস্তারিত জেনে নিন!
এত কম খাবার খেয়েও মুটিয়ে যাচ্ছেন কেন? রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রনই হচ্ছে না? আপনাকে জানতে হবে মুটিয়ে যাবার কারণ কী?
সাধারণত শর্করা জাতীয় খাবার আপনার শরীরে ইনসুলিন রিলিজ বা নিঃসরণ করে। এই ইনসুলিন আপনার শরীরে ফ্যাট বা চর্বি ভাঙ্গতে বাধা দেয় এবং নতুন চর্বি তৈরীতে সাহায্য করে। এসব ক্ষেত্রে আপনাক শুরু করতে হবে লো কার্ব ডায়েট বা কিটো ডায়েট।
লো কার্ব বা কিটো ডায়েট কী?
অধিংকাশ মানুষই আজকাল লো কার্ব ডায়েট শুরু করেছেন ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে অথবা রক্তে সুগারের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করতে। লো কার্ব ডায়েটে মূলত উচ্চ মাত্রার শর্করা জাতীয় খাবার বা চিনিযুক্ত খাবার সীমিতকরণ করা হয় এবং এর জায়গায় স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার যুক্ত করা হয়েছে।
তবে লো-কার্ব ডায়েট সবার জন্য নয়। ওজন, উচ্চতা, শারীরিক সমস্যা, বিএমআই এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে এক একজনের ডায়েট চার্ট এক একরকম হয়। তবে হঠাৎ করেই খুব কঠিন কোনও ডায়েট বেছে নেবেন না বা এমন কিছু করবেন না যাতে আপনি অভ্যস্ত নন।
কাদের জন্য লো-কার্ব ডায়েট?
যাদের কিডনী ক্রীয়া ভালো আছে তবে ডায়াবেটিসে ভুগছেন, পুরোপুরি সুস্থ্য তবে পরিশ্রম করেও মুটিয়ে যাচ্ছেন, BMI বেশী, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রম(PCOS),হাইপোথাইরেডিজমে ভুগছেন তাদের জন্য লো-কার্ব ডায়েট বেশ উপযোগী।
কেন লো-কার্ব ডায়েট অন্যান্য ডায়েটিং পদ্ধতির তুলনায় দ্রুত ওজন হ্রাস করে ?
তার কারণ হলো ইনসুলিন নিঃসরণ হ্রাস। ইনসুলিন চর্বি তৈরীতে সাহায্য করে এবং চর্বি ভাঙ্গতে দেয়না। আর এই লো-কার্ব ঠিক তার বিপরীতে কাজ করে।
আবার স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন ক্ষুধা নিবারণ কর, খাবারে তৃপ্তি আনে এবং বিপাকীয় ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা অ্যাট চ্যাপেল হিলের মেজর ইভালুয়েশনের সহযোগী গবেষক সুস্মিতা হোসাইন খান বলেন, "লো কার্ব ডায়েট ওজন কমাতে কার্যকরী হলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। হুট করে একদিন খাবার থেকে সব কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে সেটা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।"
লো কার্ব ডায়েটের সুবিধা
লো কার্ব ডায়েট ওজন কমাতে সাহায্য করার পাশাপাশি আরও কিছু উপকারে আসে। আপনি এই ডায়েটের সাহায্যে নিম্নবর্ণিত বিষয়ে উপকার পেয়ে থাকবেন -
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
- টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
এখানে কয়েকটি জনপ্রিয় লো কার্ব ডায়েটের ধরণ রয়েছেঃ
কিটোজেনিক (কেটো) ডায়েট
এই ডায়েটে কম কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চমাত্রার ভালো স্নেহজাতীয়/ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের তালিকা করা হয়।দৈনিক কার্বোহাইড্রেট গ্রহণকে মোট ক্যালোরির ১০% বা প্রায় ২০-৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
কিটো ডায়েট অলিভ অয়েল, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার যেমনঃ মাখন/বাটার এবং নারকেল তেল এর মতো উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদানগুলি ব্যবহার করতেও উৎসাহিত করে।
অ্যাটকিনস ডায়েট
এই কম কার্বোহাইড্রেট, উচ্চ প্রোটিন ডায়েটকে সাধারণত একাধিক ধাপে ভাগ করা হয়, যা দৈনিক কার্বের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয়। অ্যাটকিনস ডায়েটের প্রথম পর্যায়ে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ প্রতিদিন ২০-৪০ গ্রাম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
আপনি কোন পরিকল্পনাটি বেছে নেবেন তার উপর নির্ভর করে। ডায়েটের সময়কাল ধরে আপনার গ্রহণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় তবে সাধারণত প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি হয় না ।
সাউথ বিচ ডায়েট
কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি, সাউথ বিচ ডায়েট চর্বিহীন মাংস এবং হার্ট-স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খেতে উৎসাহিত করে।
কি কি খাবেন আর কি খাবেন না?
১. এই ডায়েটে মূলত কমিয়ে ফেলতে হবে শর্করা এর পরিমান, যেমনঃ ভাত, আলু, রুটি, নুডুলস, পাস্তা, পিজ্জা, বন ইত্যাদি।
তবে কমিয়ে ফেলা মানে কিন্তু একদম জিরো করে ফেলা নয়। শর্করা কিছুটা হলেও ডায়েটে রাখবেন যেমনঃ একটি রুটি বা হাফ কাপ ভাত বা একটি কলা।
২. সেই সাথে ভালো মানের স্বাস্থ্যকর স্নেহজাতীয় খাদ্য যেমনঃ বাদাম, চিজ, বাটার, তৈলাক্ত মাছ (যেমনঃ ইলিশ, বোয়াল, কোরাল, সেমন, সার্ডিন ইত্যাদি) তৈলের মধ্যে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, নারিকেল তৈল এগুলো ভালো ফ্যাট যা আপনার রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাবে। তবে সয়াবন তৈল, গরুর চর্বি, ডালডা এগুলো খারাপ ফ্যাট তাই এগুলো সম্পূর্ণ নিষেধ।
৩. ভালো মানের প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমনঃ মুরগীর মাংস, ডিম, দুধ, বিভিন্ন দেশী মাছ, মুসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা এবং বিপুল পরিমানে শাক সবজি যেমনঃ পালং শাক, পুঁই শাক, ব্রোকলি, ফুলকপি, লাউ, বাঁধাকপি, সিম, ঢেড়শ ইত্যাদি। সবজির মধ্যে বাদ দিতে হবে আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা। ফলের মধ্যে বাদ দিতে হবে আপেল, আঙুর, কলা, তরমুজ।
৪. প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে যাতে কিডনী ভালো থাকে। কারণ কিটো ডায়েটে বা লো কার্ব ডায়েটে কিডনীর উপর অনেক বেশী চাপ পড়ে।
কিটো ডায়েটের সাবধানতা
লো কার্ব ডায়েটের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সম্পর্কে বেশকিছু বিতর্ক আছে। লো কার্ব ডায়েটে কিটোসিস, দীর্ঘমেয়াদী হৃদরোগের আশংকা, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওযা এবং কিডনীর প্রভাব সম্পর্কিত এবং শর্করা কম থাকার কারণে অনেকের মাথা ঘুরতে পারে, ক্লান্তি অনুভুত হতে পারে।
গ্লুকোজ বা শর্করা হলো আপনার ব্রেইনের প্রধান খাদ্য। তাই ব্রেইনকে সচল রাখতে লো-কার্ব হলেও জিরো কার্ব নয়।