গর্ভধারণের জন্য সহবাসের নিয়ম

আজকাল অনেক কাপলই বাচ্চা নিতে গিয়ে কম বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন। এদের মধ্যে কর্মজীবী কাপলের সংখ্যা অনেক বেশি। 
গর্ভধারণের জন্য সহবাসের নিয়ম
এজন্য অনেকে স্ট্রেসফুল জীবন যাপন, কাজের চাপ, মানসিক চাপ, হরমোনাল কারণ, সঠিক সময়ে সেক্স, নিউট্রিশন ঘাটতি ইত্যাদিকে দায়ী করে থাকেন। 

বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, চিকিৎসা করার পরেও অনেকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাননা। আবার অনেকেই সেক্সের পজিশনকে দায়ী করে থাকেন।

আজ আমরা গর্ভধারণ এর ক্ষেত্রে সেক্সের পজিশন এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো। এটি এখনও বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয় যে কোন পজিশনে সেক্স করলে তা গর্ভধারণে সবচেয়ে উপযোগী হয় তবুও গবেষণা তো আর থেমে থাকে না তাই এ নিয়ে মতামতেরও অভাব নেই।

সেক্স পজিশন কেন জরুরী?

একটি সফল গর্ভধারণ এর সময় নির্বাচনের পর পরই প্রধান কাজ হলো শুক্রাণু বা স্পার্মকে ফেলোপিয়ান নালীতে প্রবেশ করানো। ফেলোপিয়ান নালীর শেষাংশে ছাতার মতো ফোলানো অংশে স্পার্ম ডিম্বানুর বা ওভামের সাথে মিশে নিষিক্ত হয়। 

এজন্য স্পার্মকে জরায়ু মুখ বা সারভিক্সের যতটা কাছাকাছি নিয়ে ফেলা যায় অর্থাৎ যোনীর যতটা ভেতরে প্রবেশ করানো যায় ততই প্রবেশ এর সম্ভাবনা বাড়ে। তাই যে পজিশনে সর্বোচ্চ দূরত্ব পর্যন্ত যাওয়া যায় অর্থাৎ পেনিট্রেশন যত গভীরে হয় বীর্যরস তত ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পায়।

কয়েকটি গবেষনার মতামতের ভিত্তিতে সর্বাধিক উপযোগী সেক্স পজিশন হলো ২ টি।

১. মিশনারী বা উপর থেকে পেনিট্রেশন 

২. ডগি স্টাইল বা পিছনের দিক থেকে পেনিট্রেশন। 

এই দুই পজিশনে সর্বাধিক পেনিট্রেশন হয়ে থাকে।

এ তো গেলো পজিশন এর কথা। এখন শুধু পজিশন ঠিক হলেই কি হবে? 
উত্তর হলো - না।

স্পার্ম যাতে বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারে সেজন্য বীর্যপাত এর সাথে সাথেই পেনিস বের করে ফেলা যাবে না। বীর্য গ্রহণের পর ১-২ মিনিট যোনীর ভিতরে সংকোচন প্রসারণের (Squeezing) হয়। যার ফলে বীর্যরস বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সময় পেনিস ভিতরে থাকলে বীর্য বাইরের দিকে না এসে ভিতরের দিকে যেতে থাকবে যা একটি সফল পেনিট্রেশন এর নির্দেশক। 

গর্ভধারণের জন্য সহবাসের পর কতক্ষণ শুয়ে থাকতে হয়?

যোনীর সংকোচন প্রসারণ বন্ধ হলে আস্তে আস্তে পেনিসকে বাইরে এনে দুই ঊরু একত্র করে দিতে হবে যাতে যোনীমুখ খোলা না থাকে। এভাবে ১২-১৫ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে। এসময় কোমড়ের পিছনে একটি বালিশ দিয়ে যোনীমুখ উচু করে রাখলে ভালো হয়। এছাড়া পা দুটির গোড়ালি একত্রে লাগিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে তা উচু করে রাখা যায় ১০ মিনিট।  এটিও স্পার্ম এর ভিতরে প্রবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

এরপর ওয়াশ রুমে গেলে যোনী পথে পিচ্ছিল পদার্থ বা পানির মতো পদার্থ বের হতে পারে, এতে সমস্যা নেই। এটা বীর্য বা সিমেন এর তরল অংশ! স্পার্ম ততক্ষণে যোনী সাতরে পাড়ি দিয়েছে জরায়ু মুখের ভেতরে।

গর্ভধারণের জন্য সেক্স বা সহবাসের পর যা করা উচিত নয়

প্রতিদিন সেক্স করার প্রয়োজন নেই। সফল গর্ভধারণ এর জন্য উইন্ডো পিরিয়ড হলো ওভুলেশন এর দিন, এর আগের ও পরের দিন - অর্থাৎ এই ৩ দিন হলো গোল্ডেন টাইম। এসময়ে বীর্যের ঘনত্ব ঠিক রাখতে মাসের প্রথম ১২ দিন সেক্স থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করলে বেশ ভালো হয় তবে তা আবশ্যক নয়।
  • সেক্সের পর পরই যোনীপথ ধোয়া।
  • কোন সাবান বা ক্ষার জাতীয় জিনিস দিয়ে পরিষ্কার করা।
  • লুব্রিক্যান্ট বা তেল, জেল ব্যবহার করা, এগুলো স্পার্মের গতি কমাতে এমনকি মেরেও ফেলতে পারে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত কোন ক্রিম, ভ্যাজাইনাল ক্যাপসুল যোনীপথে ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাহলে গর্ভধারণ এর জন্য সেক্স এর সবচেয়ে বাজে পজিশন কোনটি? 
উত্তর হলো - একটিও না

এর কারণ হলো একবার বীর্যপাত এ কয়েকশো কোটি শুক্রাণু বা স্পার্ম নির্গত হয়। এর একটি মাত্র স্পার্মই নিষেকের জন্য যথেষ্ট!

এই কোটি কোটি স্পার্ম এর সিংহভাগই জরায়ু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা। যারা যায় তাদের সবাই ফেলোপিয়ান নালীতে যায় না। এরপরেও কয়েক কোটি স্পার্ম লক্ষ্যস্থল এ পৌছায় কিন্তু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয় মাত্র একটি! 

তাই সহবাসের পজিশন ছাড়াও অন্যান্য নিয়মাবলী যা নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করা হলে তা মানতে হবে। সর্বোপরি সেক্স স্টাইল, সেক্স পরবর্তী নিয়মাবলি, হেলদি লাইফস্টাইল ও সুষম পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমেই একটি সফল গর্ভধারণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url